মিশনারি থেকে শিশু বিক্রি, আটক ২

সন্তান জন্মের পর তাদের দায়িত্ব না নিতে পেরে রাস্তায় ফেলে যেতেন কোনো নর বা নারী। তখন এই শিশুদের জায়গা হতো কোনো মিশনারিজ চ্যারিটিতে কিংবা এতিমখানায়। কিন্তু এই জায়গাগুলোও এখন পরিণত হয়েছে ব্যবসায়িক খোঁয়াড়ে। দিনে দুপুরে শিশু বিক্রির ঘটনা ঘটছে এ ধরনের চ্যারিটিগুলোতেও।

সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে ভারতের রাঁচিতে। ‘নির্মল হৃদয়’ নামে রাঁচি মিশনারিজ অব চ্যারিটির কয়েকজন সন্ন্যাসিনী শিশু বিক্রির কাজ করছে বলে অভিযোগ পাওয়ার পর এমন ঘটনা সামনে আসে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নির্মল হৃদয়’ রাঁচি মিশনারিজ অব চ্যারিটির কয়েকজন সন্ন্যাসিনী শিশু বিক্রির ব্যবসায় জড়িত। তারা ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় এই চ্যারিটির বেশ কয়েকজন শিশুকে বিক্রি করে দিয়েছে। এর পর পরই সেখানে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়।

ঝাড়খণ্ড পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, শিশু বিক্রির অভিযোগ পেয়ে তারা তদন্ত শুরু করে। এ সময় নির্মল হৃদয়ের সিস্টার কোনসিলিয়া ও অনিমা ইন্দওয়ারের শিশু বিক্রির বিষয়টি সামনে আসে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করে ৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পর জেরার মুখে বিষয়টি স্বীকার করেন তারা।

স্বীকারোক্তিতে সিস্টার কোনসিলিয়া ও অনিমা ইন্দওয়ার জানিয়েছেন, এখানকার সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান বাচ্চাদের প্রতি সন্তানহীন বাবা মায়ের এক রকম ভালোবাসা দেখে তারা শিশু বিক্রির ব্যবসা মাথায় আনেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগযোগ করে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় এক একটি শিশু বিক্রি করতেন।

নির্মল হৃদয়ের মিশনের সিস্টার কোনসিলিয়া একটি লিখিত স্বীকারোক্তি। ছবি : এনডিটিভি
নির্মল হৃদয়ের মিশনের সিস্টার কোনসিলিয়া একটি লিখিত স্বীকারোক্তি। ছবি : এনডিটিভি

ইতিমধ্যে নির্মল হৃদয়ের সিস্টার কোনসিলিয়া একটি লিখিত স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। একই সঙ্গে একটি ভিডিও পুলিশের হাতে দিয়েছেন তিনি। ভিডিওটিতে তিনি বলেছেন, তাদের এই চক্রের কথা কেউ জানতেন না। শিশু বিক্রির বিষয়টি তিনি ও করিশ্মা নামে এক নারীর জানা ছিল। এমনকি এ ব্যাপারে কিছু জানতেন না রাঁচির মিশনারিজ অব চ্যারিটি প্রধান সন্ন্যাসিনীও।

শিশু বিক্রির কথা স্বীকার করে অনিমা ইন্দওয়ার জানিয়েছেন, গত ৫ বছর ধরে মিশনারিজ অব চ্যারিটির সঙ্গে যুক্ত তিনি। সিস্টার কোনসিলিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে একাধিক শিশু বিক্রি করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত চারটি শিশু বিক্রি করেছেন তারা। চারটিই পুত্রসন্তান ছিল। একজনকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকাতে বিক্রি করার পর ২০ হাজার টাকা নিজের কাছে রেখে বাকি ১ লাখ টাকা সিস্টার কোনসিলিয়াকে দিয়ে দেন বলেও স্বীকার করেন অনিমা।

এদিকে সিস্টার কোনসিলিয়ার পক্ষে সরব হয়েছেন তার আইনজীবী। মুকুলেশ নামে এই আইনজীবী এনডিটিভিকে বলেছেন, তার মক্কেলকে রিমান্ডে নিয়ে জোর করে বয়ান আদায় করেছে পুলিশ।

বিক্রি হওয়া শিশুগুলোর ব্যাপারে কি করবেন জিজ্ঞাসা করলে ঝাড়খণ্ড পুলিশ প্রধান এনডিটিভিকে বলেছেন, আগে খোঁজ নেওয়া হবে শিশুগুলো কোথায় ও কেমন আছে। তারা যদি ভালো পরিবার পায় তবে তাদের সেখান থেকে আনা হবে না। কিন্তু তারা যদি খারাপ পরিবেশে বসবাস করে তাহলে তাদের অন্য কোনো মিশনারিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

নির্মল হৃদয় রাঁচি মিশনারিজ অব চ্যারিটি প্রধান বলেছেন, শিশু বিক্রির ব্যবসায় যারা জড়িত তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। যদিও তারা কিছু জানেন না, তবুও তদন্তের ব্যাপারে তারা পুলিশকে সম্পূর্ণ সহায়তা দেবেন।